জাতীয়

শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় মসৃণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন: মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক

জনপদ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বলেছে, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে। এরপর তার দেশ পরিচালনায় যাত্রা মসৃণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পর কিছু সমালোচক সতর্ক করেছিলেন, বাংলাদেশ কার্যকর একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দলটি ২২৩ এবং অনুগত স্বতন্ত্ররা ৬২ আসনে জয়ী হয়েছে। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন, সংসদে কোনও অর্থবহ বিরোধী দল নেই।

গত ৮ এপ্রিল আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভারতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী লেখেন, মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে হাসিনার সরকার পরিচালনার জাহাজটি এখন মসৃণ সমুদ্রে যাত্রা করছে।

লাহিড়ী বাংলাদেশের ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে একজন স্বাধীন বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং পঞ্চম মেয়াদে সরকার গঠন করে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নারী সরকার প্রধান হিসেবে আর্বিভূত হন।

লাহিড়ী উল্লেখ করেন, জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জয় এই অঞ্চলের প্রায় সব মহলেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও ভারত তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। আঞ্চলিক শক্তি, মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক ঝোঁক নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এসেছে।

তিনি লেখেন, যাই হোক আওয়ামী লীগ সরকারের বেশিরভাগ দৃষ্টি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এটি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রচারের জন্য কতটা সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেছে তা দেখে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, নির্বাচনগুলো অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না। ইউএস কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

লাহিড়ী বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করলেও সব বিরোধী দল তা অনুসরণ করেনি। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেই সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। অফিসিয়াল ভোটার (৪১.৮ শতাংশ) গত নির্বাচনের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু অভূতপূর্ব নয়। কেউ কেউ এই ভোটারকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখেন, বিরোধীদের বয়কট জনগণের মনোভাব প্রতিফলিত করে।

তিনি বলেন, বিএনপির বয়কট কিছু ভোটারদের উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে। তবে এটি অগত্যা জনগণের ভোট প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে না। ভোটের দৌড়ে বিএনপির নির্বাচন বিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় পরিণত হয়। শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দলটির অনুগতদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের আগের দিন দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় তারা। অগ্নিসংযোগকারীরা ভোটকেন্দ্র ও একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে চারজন নিহত হন।
‘আতঙ্কের এই বিরাজমান পরিস্থিতিতে কিছু ভোটারকে নির্বাচনের দিন বাড়িতেই অবস্থান করতে হয়েছে।

বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে লাহিড়ী উল্লেখ করেন, দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে আওয়ামী লীগ অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকি নিয়েছিল। তবুও এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে কণ্ঠস্বরের বৈচিত্রকে প্রসারিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে তেমনটা না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একইরকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।

তিনি জানান, একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্রের কাছে না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। প্রধান প্রশ্ন হলো- আওয়ামী লীগ অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনিবার্য পরিণতি ছিল।

লাহিড়ী বলেন, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল কেন বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে। আওয়ামী লীগের অধীনে ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো নজির নেই। বিএনপির দাবিকে অভিহিত করা হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবির এখনও ভিত্তি নেই। বয়কট শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সাহায্য করেছিল।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির বিষয়ে উচ্চতর আশা করেছিল। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পরকিত খবর

Back to top button