রাজশাহী , রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষে আগামী ১৬ জুন ২০২৪ থেকে ২১ জুন ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত বাংলার জনপদের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ২২ জুন ২০২৪ তারিখ থেকে পুনরায় সকল কার্যক্রম চালু থাকবে। ***ধন্যবাদ**

‘নির্বাচন নিয়ে যা বলেছি ফল হয়নি’: মাহবুব তালুকদার

  • আপডেটের সময় : ১১:০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮২ টাইম ভিউ
Adds Banner_2024

জনপদ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত ছিল নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। বেশির ভাগ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও ঠাঁই হয় না। ’

মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফল হয়েছে বলে মনে হয় না।

Trulli

আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সব সংকটের সমাধান দেখতে চাই। ’

নির্বাচন কমিশন থেকে বিদায়ের শেষ মুহূর্তে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে না থাকার কারণ জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, মুক্তভাবে কথা বলতে আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন তিনি।

‘আমার কথা’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটিই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ’

বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে প্রবীণ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। ’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পাঁচ আঙুলের একটি হলেও আমি যে কোন আঙুল ছিলাম, তা জানি না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমি কমিশনে বক্তব্য দিতে গেলেও তা দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হলো, এগুলো সংবিধানবিরোধী। একজনের পক্ষে কিছুই করা যায় না। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে আমি সংখ্যালঘু হিসেবে হেরে গেছি। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এই বিদায়ি নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘খুব দুঃখজনক যে মন্ত্রিপরিষদসচিবের প্রেস ব্রিফিং থেকে জানতে পারলাম, আমি বিএনপির মুখপাত্র। আমি কোনো বিষয়ে জোরেশোরে কথা বললেই বলা হয়, আমি বিএনপির সুরে কথা বলছি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের থেকেও এই কথা শুনি। মুশকিলটা হচ্ছে, বিএনপির যে কী সুর, তা আমি জানি না। আমি নীরব জনগোষ্ঠীর ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছি। মানুষের অশ্রুত ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছি। যা কিছু বলেছি, তাদের মুখপাত্র হিসেবে বলেছি। ’

Adds Banner_2024

‘নির্বাচন নিয়ে যা বলেছি ফল হয়নি’: মাহবুব তালুকদার

আপডেটের সময় : ১১:০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২

জনপদ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত ছিল নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। বেশির ভাগ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও ঠাঁই হয় না। ’

মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফল হয়েছে বলে মনে হয় না।

Trulli

আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সব সংকটের সমাধান দেখতে চাই। ’

নির্বাচন কমিশন থেকে বিদায়ের শেষ মুহূর্তে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে না থাকার কারণ জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, মুক্তভাবে কথা বলতে আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন তিনি।

‘আমার কথা’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটিই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ’

বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে প্রবীণ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। ’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পাঁচ আঙুলের একটি হলেও আমি যে কোন আঙুল ছিলাম, তা জানি না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমি কমিশনে বক্তব্য দিতে গেলেও তা দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হলো, এগুলো সংবিধানবিরোধী। একজনের পক্ষে কিছুই করা যায় না। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে আমি সংখ্যালঘু হিসেবে হেরে গেছি। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এই বিদায়ি নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘খুব দুঃখজনক যে মন্ত্রিপরিষদসচিবের প্রেস ব্রিফিং থেকে জানতে পারলাম, আমি বিএনপির মুখপাত্র। আমি কোনো বিষয়ে জোরেশোরে কথা বললেই বলা হয়, আমি বিএনপির সুরে কথা বলছি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের থেকেও এই কথা শুনি। মুশকিলটা হচ্ছে, বিএনপির যে কী সুর, তা আমি জানি না। আমি নীরব জনগোষ্ঠীর ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছি। মানুষের অশ্রুত ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছি। যা কিছু বলেছি, তাদের মুখপাত্র হিসেবে বলেছি। ’