সারাবাংলা

ভাতা পান না বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের পরিবার

জনপদ ডেস্ক: এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবের ভাতা পাচ্ছেন না বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের সন্তানরা। তার বসতভিটাও অরক্ষিত। বসতভিটায় সীমানা প্রাচীর, একটি রেস্ট হাউজ ও স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠের দুই মেয়ে, এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। এজন্য আমরা গর্বিত। মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর মারা গেছেন। আমার বাবার বীরশ্রেষ্ঠ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার দুইটি খেতাব আছে। তবে এক বছরেরও বেশি সময় বাবার বাৎসরিক তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা ভাতা (চার ভাইবোন মিলে) পাচ্ছি না। এরআগে তিন বছর ধরে যশোর বিজিবি রিজিওনাল অফিস নিয়মিত আমাদের চেক দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের দেওয়া বাড়িটি মেরামতের জন্য আবেদন করেছি। সেটাও করা হয়নি। জেলা পরিষদ থেকে বীরশ্রেষ্ঠদের জমি বা বাড়ি করে দেয় সেটাও আমাদের করে দেয়নি। আমাদের দাবি, জেলা পরিষদ যেন বাড়ি করে দেয়।’

বীরশ্রেষ্ঠের ছোট মেয়ে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আমাদের দেখতে আসেন। তাই আমার বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটায় একটি সরকারি রেস্ট হাউজ ও একজন লোক থাকলে ভালো হয়। আমার মেয়ে জাকিয়া রুখসানা জলি বরিশাল সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছে। সরকার যেন তার একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।’

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। তবে দুই মেয়ে সুফিয়া বেগম, রোকেয়া বেগম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ এলাকাবাসীর দাবি, নূর মোহাম্মদের বসতভিটায় একটি রেস্ট হাউজ করা হোক। পাশাপাশি নূর মোহাম্মদের জীবনভিত্তিক বই-পুস্তক, ব্যবহার্য ও স্মৃতি বিজড়িত জিনিসপত্র সংরক্ষণের দাবি জানান তারা।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গোলাম কবির বলেন, ‘সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যায় নড়াইল দ্বিতীয়। সরকারের কাছে দাবি, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভিটা ও তার স্মৃতি সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক কাজ হয়েছে। তবে তার পৈতৃক ভিটার চারপাশে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াশরুম করার বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। সারা বছর যারা ভিজিটে আসেন তাদের জন্য বসার ব্যবস্থা করাটাও জরুরি। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিবকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাতার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আপনার মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরে আনবো।’

জানতে চাইলে যশোর বিজিবি রিজিওনাল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল বলেন, ‘ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এটি জানানো হবে।’

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন। ওইদিন পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলে তাকে কাঁধে নিয়ে শত্রুপক্ষের দিকে গুলি ছুড়তে থাকেন নূর মোহাম্মদ। হঠাৎ মর্টারের আঘাতে তার হাঁটু ভেঙে যায়। তবুও গুলি চালাতে থাকেন তিনি। একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জাতির এ সূর্যসন্তান। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

আরো দেখুন

সম্পরকিত খবর

Back to top button