আন্তর্জাতিক

২২ জনের রক্তে ভিজল মিয়ানমারের বৌদ্ধ মঠ

জনপদ ডেস্কঃ মিয়ানমারে গত সপ্তাহে তিন বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ অন্তত ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার জন্য সামরিক বাহিনীকেই দায়ী করছে সেনাশাসন বিরোধীরা। শুক্রবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণের শান রাজ্যের পিনলাউং অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংঘাতে বেসামরিক কোনো নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তার দাবি, নান নিয়েন্ত গ্রামের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী পৌঁছানোর পর সেখানে কারেন্নি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) এবং আরেকটি বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা যখন এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে, তখন কিছু গ্রামবাসী মারা যান, আহত হন অনেকে।

কেএনডিএফের মুখপাত্র দাবি করেন, তাদের যোদ্ধারা রোববার (১২ মার্চ) নান নিয়েন্ত গ্রামে ঢোকার পর একটি বৌদ্ধ মঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় মরদেহগুলো দেখতে পায়।

কেএনডিএফ এবং আরেকটি বিদ্রোহী গ্রুপ কারেন্নি রেভোল্যুশন ইউনিয়ন (কেআরইউ) কিছু ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ করেছে। সেগুলোতে দেখা যায়, মরদেহগুলোর শরীর এবং মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে, মন্দিরের দেয়ালেও রয়েছে গুলির দাগ। তবে কোনো পক্ষের দাবিই নিরপক্ষেভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামে পরিচিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরোধী ছায়া সরকারের সদস্য ড. ইয়ে জাও মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করেছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, খুব কাছ থেকে সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরদেহগুলোর আশপাশে কোনো সামরিক পোশাক, অস্ত্র বা গুলি পাওয়া যায়নি। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে তারা বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে তিনজনের গায়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গেরুয়া রংয়ের পোশাক ছিল বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু সব মরদেহ মঠ চত্বরের মধ্যে পাওয়া গেছে, ফলে ধরে নেওয়া যায় যে এটি একটি বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী অং মিও মিন বলেন, গত দুই সপ্তাহে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার এমন অন্তত চারটি ঘটনা ঘটিয়েছে সামরিক জান্তা।

একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে বেসামরিক জনগণকে টার্গেটে পরিণত করেছে সামরিক জান্তা। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। তবে বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জান্তা। তাদের এ অভিযানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান বলে দাবি করা হয়েছে।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তথ্যানুযায়ী, নির্বাচিত সরকারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে অন্তত তিন হাজার ১৩৭ জন মানুষ মারা গেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘও।

আরো দেখুন

সম্পরকিত খবর

Back to top button